আমরা যারা জন্মগতভাবে নিজেদের মুসলিম দাবি করি। কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছি। আমার কালিমা পাঠ কী আমাকে মুসলিম বানাতে পেরেছে? আমরা কি কখনো একবারও ভেবে চিন্তে কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ " পড়েছি? নাকি আমার জন্ম মুসলিম ঘরে বিধায় আমিও অটোমেটিক মুসলমান হয়ে গেছি। মুখে কালেমার বাক্য উচ্চারণ করলেই কি মুসলিম হওয়া যায়? নাকি কালেমার মধ্যে কী আছে সেটা জেনে বুঝে উচ্চারণ ও পালন করার নামই মুসলিম? যদি বলেন কালেমা মুখে উচ্চারণ করার মধ্য দিয়ে আপনি মুসলিম হয়ে গেছেন তাহলে আপনার জন্য এই লেখা হিদায়াতের সহায়ক। যদি বলেন কালেমা শুধু মুখে নয় বরং বুঝা এবং পালনের বিষয় তাহলে আপনিও মিলিয়ে নিন সঠিকটা।
কালেমার অর্থঃ
আমরা মুসলিমরা সবাই কম বেশি এই কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ "এর সাথে পরিচিত। যারা জন্মগতভাবে মুসলমান তারা কখনোই এই কালেমাকে গুরুত্ব দিয়ে বুঝে পড়ি না। তাই আমাদের উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এই কালেমার শর্ত এবং দাবি পূরণে ব্যর্থ। তাই আসুন মৃত্যুর আগে একবার হলেও এই কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ "বুঝে পড়ে এর শর্ত এবং দাবি গুলো পূরণে সচেষ্ট হই।
" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ "কে অর্থবোধক বাক্য করলে দাঁড়ায় " আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই " অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র উপাস্য বা ইবাদতের যোগ্য। সুতরাং যে এই কালেমার স্বীকৃতি দেয় তাকে দুনিয়ার সব আনুগত্য ছেড়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত তথা আনুগত্য করতে হবে। "মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ "অর্থ হলো মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। শুধু এতটুকু বলে বুঝলে হবে না।
কালেমার গুরুত্বঃ
আমাদের পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরে যে দুনিয়া তার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হলো এই কালেমা। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তার সহযোগী করার জন্য এই পৃথিবীর বাকি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। এ কালেমার সাক্ষ্যদাতাও একমাত্র মানুষ। আর মানুষের জন্য সাক্ষী হচ্ছে পুরো সৃষ্টি জগত।
অর্থাৎ পুরো সৃষ্টিজগতের রহস্য উপলব্ধি করে মানুষ যেন এই সাক্ষ্য দেয়। তাই আল্লাহ মানুষ থেকে কালেমার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য পুরো সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বিধি-বিধান ইহকাল পরকাল জান্নাত জাহান্নাম সবকিছুই শুধুমাত্র এই কালেমার জন্য সৃষ্টি।
যারা এই কালেমার গুরুত্ব বুঝতে না পেরে বেহিসাবী জীবন যাপন করবে তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন জাহান্নাম। আর যারা এ কালেমার গুরুত্ব সঠিকভাবে বুঝে সেই মতে জীবন যাপন করবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। সর্বোপরি বলতে গেলে নেয়ামত যেমন এই কালিমার জন্য। ঠিক তেমনি মানুষের আযাবের কারণও এ কালেমা।
আল্লাহ্ আমাদের পরীক্ষা করার জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই পরীক্ষা নিতে তিনি মানুষের জন্য কিছু বিধিবিধান নাযিল করেছেন। যা আমাদের মেনে চলতে হবে তাঁর রাসুলের (সাঃ) আদর্শ দিয়ে। এই কালেমা হচ্ছে সেইসব বিধিবিধান রাসুলের (সাঃ) আদর্শে মেনে নেওয়ার স্বীকৃতি মাত্র।
কালেমার ব্যাখ্যাঃ
আমরা সাধারন মুসলমানগণ মনে করি যে একবার কালেমা পড়লে আমরা মুসলিম হয়ে গেছি। আসলেই ব্যাপারটা তা নয়। মুসলিম শব্দের অর্থ হচ্ছে আনুগত্যকারী। অর্থাৎ যার আনুগত্য একমাত্র আল্লাহ। যে একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করবে সেই হবে মুসলিম। যারা আল্লাহর বিধান তথা তার আদেশ এবং নিষেধ মেনে রাসুলের (সাঃ) এর ত্বরিকায় মেনে চলবে তারাই আল্লাহর কাছে নিজেদের মুসলিম দাবি করতে পারবে।
সেজন্য হাদীসে এসেছে-
" যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর স্বীকৃতি দান করল এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যকে অস্বীকার করল। তার ধন সম্পদ ও জীবন নিরাপদ। তার কৃতকর্মের হিসাব আল্লাহ উপর বর্তাল।"
এখানে স্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে রাসূল( সাঃ) বলেছেন যে কালেমার স্বীকৃতি দিলো ও অন্য উপাস্যকে অস্বীকার করল সুতরাং তার কৃতকর্মের হিসাব আল্লাহর উপর বার্তাল। এখানে তার কৃতকর্মের দ্বারা তার দুনিয়ার সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কেউ কালেমা পড়লে তার উপর আল্লাহর সমস্ত বিধান ফরজ হয়ে গেলো।
তাহলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে এই কালেমার গুরুত্ব ও গভীরতা কতটুকু। সুতরাং শুধুমাত্র" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ " বললেই সব শেষ হয়ে যায় না। আমাদের এর মূল ব্যাখ্যা এবং শর্তসমূহ গভীর থেকে উপলব্ধি করতে হবে। এই কালেমা শুধুমাত্র কোন বাক্য নয়। এ কালেমা হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। আর তা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধানের রাসুলের(সাঃ) আদর্শে অনুসরণ।
যারা এই কালেমা পড়ে নিজেদের মুসলিম দাবি করবে তাদের জন্য রয়েছে সাতটি শর্ত। এই শর্তসমূহ যারা পরিপূর্ণভাবে মেনে নিতে এবং চলতে পারবে তারাই হচ্ছেন প্রকৃত মুসলিম।
শর্তসমূহ হচ্ছেঃ
১) ইলম বা জ্ঞানঃ
এই কালেমায়" না" এবং "হ্যাঁ" দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে তা জানতে হবে। না বুঝে হ্যাঁ এবং না বলার কোনো অর্থ হতে পারে না। যে কালেমা পড়ে সাক্ষী দিবে তাকে কালেমার মধ্যে থাকা হ্যাঁ এবং না কী জিনিস তা বুঝতে হবে। বুঝার জন্য নিজস্ব জ্ঞান দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।
২) ইয়াকীন বা দৃঢ় প্রত্যয়ঃ
কালেমার মধ্য দিয়ে যা যা বলা হচ্ছে তা শক্তভাবে স্বীকার করা এবং সেখানে শেষ পর্যন্ত অটল থাকা। কোনরকম হেরফের না করা এবং মনে কোন প্রকার সন্দেহ না রাখা। যারা এই কালেমা উচ্চারণ করবে তাদের মনে এই কালেমা সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর দৃঢ়তা থাকতে হবে। এই দৃঢ়তা কোনো কিছুতেই কখনো নষ্ট হওয়া যাবে না।
৩) ইখলাস বা নিষ্ঠাঃ
ইখলাস মানে নিষ্ঠা। যারা এই কালেমা উচ্চারণ এবং মেনে নেওয়ার মাধ্যমে ইসলামকে কবুল করবে। তাদের এই কালেমা তথা ইসলামের প্রতিটি বিধিবিধান নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। যদি ইসলামের বিধানসমূহ পালনে নিষ্ঠা না থাকে তবে তার কালেমার শর্ত পূরণ হলো না।
৪) সত্যবাদিতাঃ
যে এই কালেমাকে মেনে নিলো তাকে সর্বদা সত্যবাদী হতে হবে । সেই সাথে ইসলামের প্রতিটি বিষয়কে সত্য বলে স্বীকার করে নিতে হবে। এই কালেমার প্রতিটি সত্যকে মেনে নিয়ে এর দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।
৫) ভালোবাসাঃ
যারা এই কালেমাকে স্বীকার করলো তাদেরকে এই কালেমা সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তুকে ভালোবাসতে হবে। দুনিয়ার সবকিছু বাদ দিয়ে ইসলামের প্রতিটি বিধানকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালবাসতে হবে। সেই সাথে যারা কালেমার দাবিদার তাদেরও ভালোবাসতে হবে। এই কালেমা উচ্চারণ করলে তাদের কালেমার শর্ত এবং দাবিসমূহ মেনে ভালোবেসেই জীবনযাপন করতে হবে।
৬) আত্মসমর্পণ আনুগত্য করাঃ
এর অর্থ হল যে এই কালেমাকে বিশ্বাস করল তাকে এ কালেমা দাবির প্রতি আনুগত্যশীল হতে হবে। জীবনের সর্বাবস্থায় কখনোই কোনোকিছুতেই পিছপা হওয়া যাবে না। যদি কখনো কোনো কারনে কালেমার দাবির থেকে অর্থাৎ ইসলামী বিধি-বিধান থেকে পিছপা হয় তাহলে সে শর্ত ভঙ্গ করলো।আর শর্ত ভঙ্গ করে কখনোই কালেমার দাবিদার হওয়া যায় না।
৭) আন্তরিকতাঃ
এই কালেমা কবুল বা স্বীকার করার মাধ্যমে এর দাবি সমূহ আন্তরিকতার সাথে পরিপূর্ণ করতে হবে। এই কালেমা যা দাবি করে সেই কাজ আন্তরিকতার সাথে শেষ করতে হবে। যারা কালেমা উচ্চারণ করে তাদের অবশ্যই এই কালেমার শর্ত এবং দাবির প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে হবে।অর্থাৎ ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ আন্তরিকতা। কোনো কাজের ক্ষেত্রেই শীতিলতা প্রদর্শন করা যাবেনা।
এই কালেমার প্রকৃত অর্থঃ
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর" অর্থ আমরা যারা আরবী বহির্ভূত ভাষাভাষী তাদের কাছে ভিন্ন। যদি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয় এই কালেমার অর্থ কি? তখন তারা বলে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। বা আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। কিন্তু এই ইলাহ এবং মাবুদ দুটোই আরবি শব্দ। যার অর্থ উপাস্য। অর্থাৎ ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। বা যার ইবাদত করতে হয়।এখানে ইবাদত শব্দটিও আরবী। যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আনুগত্য বা মান্য করা বা মেনে নেওয়া ইত্যাদি। আমরা সাধারন মুসলমানগন মনে করি যে ইবাদত মানে সালাত সিয়াম হজ্ব যাকাত ইত্যাদি। কিন্তু বিষয়টি মোটেই তা নয়। ইবাদতের সঠিক অর্থ হলো আল্লাহ্ কে সামগ্রিকভাবে মেনে নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সমস্ত বিধিবিধানের আনুগত্য করা।
এখন যদি কালেমার বাংলা করি - তাহলে দাঁড়াবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন বিষয় বা ব্যক্তির আনুগত্য করা বা মেনে নেওয়া যাবেনা। অর্থাৎ যিনি নিজেকে মুসলিম দাবি করবেন তিনি তার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কোনো আনুগত্য করবে না। আরো সহজ কথা হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক নেই। আল্লাহই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক।
সার্বভৌম ক্ষমতা হচ্ছে চতুর্দিকের সব ক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়া। অর্থাৎ এই সৃষ্টি জগতে যত প্রকার ক্ষমতা বা শক্তি আছে তা এই একক সার্বভৌম ক্ষমতার মধ্যে পুঞ্জীভূত। এটাই আল্লাহর একক সার্বভৌম ক্ষমতা। আল্লাহর এই সার্বভৌম ক্ষমতা কয়েকটি বিষয় নিয়ে গঠিতঃ
ক) সৃষ্টির ক্ষমতাঃ
মহাবিশ্ব সহ চাক্ষুষ এবং অদৃশ্য যত কিছু সৃষ্টি আছে তার একমাত্র মালিক আল্লাহ। তিনি বলেন-
" আল্লাহ তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা (অর্থাৎ সৃষ্টি কর্তা) " (সূরা আনআম: ১০২)।
এই আয়াতে স্পষ্ট যে আল্লাহ্ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তিনি ছাড়া কেউ কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না।
খ) বিধি-বিধান আল্লাহরঃ
পৃথিবীর সকল বিষয়ে বিধি-বিধান আদেশ নিষেধ আইন প্রণয়ন ইত্যাদির মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি বলেন -
"জেনে রেখো সৃষ্টি যেহেতু তার সুতরাং সমগ্র সৃষ্টির উপর ক্ষমতা ও একমাত্র তার"( সূরা আরাফ ৫৪")।
সুতরাং যেহেতু আল্লাহ্ ই সমগ্র সৃষ্টি জগতের মালিক সেহেতু আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র বিধানদাতা।
গ) বিচার ও শাসন ক্ষমতাঃ
এই জগতের সবকিছুর বিচার এবং শাসন করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ বলেন -
"আল্লাহ ব্যতীত বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই"। (সূরা নাম আনাম ৫৭)
পৃথিবীতে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর আইন ছাড়া কোনো বিচার বা শাসন ব্যবস্থা নেই।
ঘ) নির্বাহী ক্ষমতাঃ
সৃষ্টি জগতে সমগ্র কিছুর উপর নির্বাহী ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ বলেন-
" তিনি যখন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তখন শুধু বলেন হও! তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়"(আল ইমরান : ৪৭ )
সুতরাং এই মহাবিশ্বে নির্বাহী ক্ষমতার মালিকও একমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর বিধান মোতাবেক সমর্থিত প্রতিনিধিগণ।
আল্লাহর সিফাত বা বিভিন্ন গুণ সমূহঃ
আল্লাহ বিভিন্ন গুণ রয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহই এর দাবিদার। যেমন কারো জন্ম মৃত্যু রিজিক আপদ-বিপদ ইত্যাদি শুধুমাত্র আল্লাহ ক্ষমতায় হয়। আল্লাহ বলেন -
আকাশ ও পৃথিবীর চাবি তাঁর কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী। [ সুরা শূরা ৪২:১২ ]
অন্য আয়াতে আছে আল্লাহ বলেন -আল্লাহ তা'আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। [ সুরা যারিয়া’ত ৫১:৫৮ ]
তিনি আরও বলেন - এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। " [ সুরা বাকারা ২:১৫৫ ]
সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে মানুষের সকল বিপদ-আপদ রোগ-শোক রিজিক হায়াত মৃত্যু ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর হাতে। এই ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর। এই বিশ্বাস সকলকে রাখতে হবে এটাই হচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পরিচয়।
কালেমার দাবি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ
আমরা যারা কালেমা পড়ে নিজেদের মুসলিম দাবি করি। তারা কতটুকু মুসলিম হতে পেরেছি তার বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। যদি মুখে কালেমা পড়ে বা কালেমা স্বীকার করলেই মুসলিম হওয়া যেত। তাহলে দুনিয়ায় যত মুসলমান আছে তারা কালেমা পড়েই জান্নাতে চলে যাবেন। কিন্তু এটা সত্য যে প্রতিটি নামধারী মুসলিম জান্নাতে যেতে পারবে না।যদি মুসলিম হলেই জান্নাতের সার্টিফিকেট পাওয়া যেত, তাহলে কালেমা পড়লেইতো হতো। আল্লাহ তাঁর রাসুল (সাঃ) সহ এইসব বিধিবিধান মানুষের জন্য নাযিল করতেন না। সুতরাং নামধারী মুসলিম নয়। প্রকৃত মুমিন মুত্তাকী পরহেযগার তথা আল্লাহর সত্যিকারের আনুগত্যশীল যারা তাঁরাই জান্নাতে যাবেন। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে কালেমা পড়া বা স্বীকার করার বিষয় নয়। বরং কালেমা মেনে চলার বিষয়। যারা কালেমার মূল বিষয় সমূহ মেনে চলতে পারবেন তারাই প্রকৃত মুমিন মুত্তাকি এবং তারাই সফলকাম।
বর্তমানে আমরা যারা মুসলিম দাবি করি তারা জন্মগতভাবেই মুসলিম। কিন্তু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ের উপর ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন সেই বিষয়ে মূল ছিল এই কালেমা। এর মধ্যে যা আছে তা বিশ্বাস করাই ইসলামের মূল ভিত্তি। এবং তারা এগুলো বিশ্বাস করেই ইসলাম কবুল করেছিলেন । তৎকালীন আরব বিশ্বে আবু জাহেল, ওতবা, সাইবারা বিশ্বাস করত যে আল্লাহ আছেন। কিন্তু তারা এ কালেমা বিশ্বাস করে আল্লাহর আইন মানতে পারেনি। কেননা তারা কালেমার মূল অর্থ কি এবং এই "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলতে কী বুঝায় তা বুঝতে পেরেছিল। যারা বর্তমানে মুসলিম আছেন তাদের তো কালেমা পড়ে মুসলিম হতে হচ্ছে না। যদি বর্তমানে এই কালেমা পড়ে মুসলিম হতে হতো। তবে অধিকাংশ মানুষেরই ঈমান থাকতো না।
এবার দেখা যাক বর্তমানে এই কালেমার ব্যাখ্যার সাথে এর দাবি কী হতে পারে। কালেমা সঠিক অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখে আমরা মনে করছি যে সালাত, সিয়াম, হজ্জ্ব, কুরবানী, যাকাত ইত্যাতি মেনে চলাই ঈমান। কিন্তু আসলেই কি তাই? যখন আমরা গভীরভাবে দৃষ্টি দেবো তখনই আমরা এর আসল সত্য উদ্ধার করতে পারব। যখনই আমরা কালেমার সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে পারব তখনই আমরা সত্যিকার ঈমানদার হতে পারব। যা সাহাবীরা(রাঃ) বুঝে ঈমানদার হয়েছিলেন। আর আমাদের ঈমানও আনতে হবে সাহাবীদের(রাঃ) এর মত। কেননা আল্লাহ বলেন- " ঈমান আনো তাদের মত যারা ঈমান এনেছে"। তেমনি ভাবে এই কালেমার মূলকথা সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা। এর আগে এ সার্বভৌম ক্ষমতার কয়েকটি বিষয়ে আমরা উল্লেখ করেছি এখন সেগুলো সাথে বর্তমান পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখি।
সৃষ্টির ক্ষমতাঃ
মহাবিশ্বের যত কিছু সৃষ্টি আছে তার সবই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের দেখা এবং না দেখা যত বিষয় আছে সবই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। শুধু তাই নয় আমরা মানুষেরা আল্লাহর সৃষ্টির মত কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারি না। বরং আমরা সৃষ্টির জন্য তাঁর ওপরই নির্ভরশীল। তিনি ব্যতীত কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। একথা আমরা সবসময় অকপটে স্বীকার করি।
বিধিবিধান দাতা আল্লাহঃ
আগেই কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে পৃথিবীতে যত প্রকার বিধি-বিধান রয়েছে যা মানুষের সৃষ্টি করেছে তা সব বাতিল। পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহই বিধি-বিধান দেওয়ার মালিক। আল্লাহর যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে শুধুমাত্র তাই বিশ্ববাসীকে মানতে হবে। যে নিজেকে এ কালামের দ্বারা মুসলিম দাবী করে। তথা নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যশীল দাবি করে। তাকে এটা মেনে নিতে হবে যে পৃথিবীর কোনো বিধান নয় বরং আল্লাহ প্রদত্ত কোরআনের বিধানই তাকে মানতে হবে। শুধু তাই নয় আল্লাহর বিধান যেখানে নেই সেখানে তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যতরকম সম্ভব চেষ্টা চালাতে হবে। যতরকম ক্ষমতা আছে তার সবটুকু দিয়ে আল্লাহর বিধান দুনিয়ায় প্রতিটি জায়গায় কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এর থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, যদি মুসলিম দাবি করি তাহলে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন আমরা দেখি যে আমাদের ৯৫ ভাগ মুসলিমের দেশে আল্লাহর বিধান নেই। অর্থাৎ আল্লাহ যে বিধি নিষেধ দিয়েছেন তা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর সংবিধান প্রতিষ্ঠিত না হয়ে থাকে। তবে আমরা কিভাবে নিজেদের মুসলিম দাবী করছি?
শুধু মুখে বললাম আমরা আল্লাহকেই একমাত্র উপাস্য হিসাবে মানি। কিন্তু আল্লাহর বিধি বিধানকে মানিনা। তাহলে কিভাবে আল্লাহকে মেনে নেওয়া হলো? মুখে মেনে নিলাম কিন্তু কাজে মানলাম না। তাহলে কি কালেমার শর্ত ও দাবি পূর্ণ হলো? কালেমার যে সাতটি শর্ত আছে তা বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট হবে যে, কালেমা মুখে নয় বরং প্রতিদিনের জীবনযাপনে মেনে নেওয়া এবং বাস্তবায়নের বিষয়ে।
এখন আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যেখানে আল্লাহর বিধি-বিধান নেই। মানুষের তৈরি আইন পালন করে মানুষের আইনের ইবাদত করছি। অর্থাৎ মানুষের আনুগত্য করছি। অথচ" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " হচ্ছে একমাত্র আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মনে করা। সেখানে আমরা আল্লাহকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে তাঁর সমকক্ষ তৈরি করে তার সাথে অংশীদার স্থাপন করছি।
যদি নিজেদের মুসলিম দাবী করি তবে এইসব আইন মানা যাবে না। যদি বাধ্য হই তবে এসব আইন সৃষ্টিতে সাহায্য করা যাবেনা। বর্তমানে আমরা বাধ্য হয়ে আইন বিধি বিধান ইত্যাদি মেনে নিয়েছি। কিন্তু এক প্রকারে আমাদের সাহায্য নিয়েই কিন্তু এসব আল্লাহ বিরোধী আইন তৈরি হচ্ছে।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, শয়তান মানুষকে সিজদা করে না করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে। কিন্তু এই আদেশ অমান্য করে নতুন কোনো আদেশ বা আইন তৈরি করেনি। যেমন সেজদা না করে প্রণাম বা নমস্কার এই জাতীয় কিছু তৈরী করেনি। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমে আল্লাহর আদেশ বাতিল করছি। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর আইন অমান্য করে তার পরিবর্তে নতুন আইন সৃষ্টি করেছি। যে কাজ শয়তান করেনি সেই কাজ আমরা করছি। তাহলে আমরা এক্ষেত্রে শয়তানের চেয়েও নিকৃষ্ট।
যেহেতু আমরা কালেমা পড়ে মুসলিম দাবি করি। তাই এর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। এটা ছাড়া কালেমা কখনোই পূর্ণ হবে না। কালেমা বলছে আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য করা যাবে না। তাহলে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের আইন দিয়ে চললে, তা কিভাবে কালেমার দাবিকে পূরণ করে ?
তৎকালীন মক্কার আবু জাহেল এবং তার অনুসারীরা আল্লাহকে মানতো। কিন্তু তারা আল্লাহর আইনকে মানতে পারেনি। আল্লাহর আইন মানতে না পারার কারণে তারা কাফির। ঠিক একইভাবে আমরাও আল্লাহর আইন না মেনে কিভাবে মুসলিম থাকতে পারি? দ্বিতীয় কথা হল পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে মুনাফেকী মুসলিমের কারণে আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানুষের আইন মানতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু আমাদের নিজেদের অজ্ঞতার কারণেও আমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন তৈরিতে সহযোগী হচ্ছি। এবং নিজেরাও মুনাফিক হচ্ছি।
আমরা যে কত সহজে মুনাফিক হচ্ছি তা নিজেরাও জানিনা। যদি প্রশ্ন করা হয় কিভাবে আমরা মুনাফিক হচ্ছি? তার সহজ উত্তর হচ্ছে গণতন্ত্রে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে। ভোটে আমরা এমপি নির্বাচন করি। সেই এমপিরা সংসদে গিয়ে আইন তৈরি করে। যেমন ইসলামে আছে চুরি করলে হাত কাটতে হবে। যে চুরি করে সে যদি স্বভাবের কারণে চুরি করে তাহলে তার হাত কেটে দিতে হবে। কিন্তু যে পেটের দায়ে চুরি করে তাহলে তাকে রাষ্ট্র পরিপূর্ণভাবে খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। এবং এটাই আল্লাহর আইন।
বর্তমানে অভাবের চোর নেই বরং স্বভাবে চোরই বেশী। যাদের পয়সা আছে তাদের আরো পয়সাওয়ালা হওয়ার লোভের কারণে বিভিন্ন দুর্নীতি করে। যদি ইসলামী আইন হয় তবে এইসব স্বভাব-চরিত্রের চোরদের হাত কাটা যাবে। আর গরিব কেউ চুরি করলে তাকে রাষ্ট্র খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু গণতন্ত্রের দুটোই অসম্ভব। গরীবকে চাকরি দেওয়া যাবে না আর পয়সাওয়ালা হাত কাটা যাবে না।তাই নতুন আইন করতে হবে।
আইন কারা করবে? এই আইন সকল এমপিরা মিলে সংসদে পাস করবে। তারা হাত কথার বদলে ছয় মাসের জেল-জরিমানা ইত্যাদি ব্যবস্থা করল। যাতে গরিবের গরিবি আরো বাড়ে আর পয়সাওয়ালা কিছুই না হয়। কেননা সে জরিমানা দিয়ে চলে আসবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে তৈরি করল এসব আইন? উত্তর এমপিরাই তৈরি করল? আর তাদের এমপি বানালো কে? উত্তর আমার আপনার মত নামধারী মুসলিমরাই ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছি। আর এই এমপিরা আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের সুবিধামতো আইন করল।
আমরা যদি কেউ ভোট না দিতাম তাহলে এইসব এমপি তৈরি হত না। আরএমপি না হলে আইন তৈরী হতোনা। এখানে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট। ভোট দেওয়ার সাথে সাথে আমরা এমপির সকল কাজের অংশীদার হলাম। অর্থাৎ এমপিরা যা করবে তার সব ভাগ আমাদের উপর বর্তাবে। তিনি ভাল কিছু করলে বা খারাপ কিছু করলে তার সবকিছুই আমাদের ওপর থাকবে। যদি দুনিয়াবী চুরি-চামারি খুন ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ এমপিরা করে তাহলে আল্লাহর কাছে তা ক্ষমা চাইলে তা তাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।
কিন্তু আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন করে তার সাথে অংশীদার করে শিরিক করার অপরাধ করলে আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। কেননা শির্ক বা আল্লাহর অংশীদার খুবই মারাত্মক অপরাধ। জেনে না-জেনে যে, শির্কের অপরাধ আমরা করছি তা আল্লাহ কেয়ামতে কখোনই ক্ষমা করবেন না। সুতরাং ইসলাম প্রতিটি ভালো কাজের সওয়াব যেমন আছে ঠিক তেমনি প্রতিটি খারাপ কাজেরও ভাগ রয়েছে। সুতরাং কোন খারাপ কাজের অংশীদার হলে তার ভাগও আমাদের নিতে হবে।
যেহেতু শক্তি দিয়ে গণতন্ত্র বন্ধ করা যাচ্ছে না। তখন আমাদের কী করনীয়? যদি আমরা এই কালেমা বিশ্বাস করি এবং মানি। তাহলে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এর সহজ উত্তর হলো। যেহেতু শক্তি দিয়ে আমরা দুর্বল সেহেতু শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। আমাদের চেষ্টা হবে এই কাজে সহযোগী না হওয়া। আমরা কারো দায়িত্ব নেব না অর্থাৎ আমরা কাউকে ভোট দিব না। সোজা কথায় ভোট না দিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করলাম। এটাই আমরা শক্তি দিয়ে পেরেছি। সুতরাং যতটুকু আমাদের সামর্থ্য পারব ততটুকই আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে না পারার কারণে যে যেই অবস্থানে আছি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। যদি এটাও সম্ভব না হয় তবে নিজেদের কিভাবে মুসলিম দাবি করবেন? তাদের ভেবে দেখা দরকার যারা আল্লাহর কালেমা পরেও ভোট দিয়ে এখনো আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন! [ইসলাম ও গনতন্ত্র এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত লিখবো]
বিচার এবং শাসন ক্ষমতাঃ
কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে এই মহাবিশ্বের সমস্ত বিষয়ের বিচার করার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর বিধান । এবং সমস্ত কিছুর শাসন করার মালিক একমাত্র আল্লাহ । অর্থাৎ পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর নিয়মে বিচার এবং শাসন ব্যবস্থা চলবে। যারা কালেমা পড়ে নিজেদের মুসলিম দাবি করবে। তাদের প্রতি কালেমার দাবি হলো জমিনে আল্লাহর বিধি বিধান মোতাবেক বিচার এবং শাসন ব্যবস্থা চালু রাখা।
এই বিষয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা আগেই বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও দুনিয়ার আইনের কারণে আজ আমরা জিম্মি হয়ে গেছি। যদি সত্যিকারের ঈমানদার দাবি করি, তাহলে এই কালেমা তথা ঈমানের দাবী হল আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠা জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এই দুনিয়ায় মানুষের তৈরি বিচার ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা থাকতে হবে। তাহলে আমরা কালেমার দাবি পূরণ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
নির্বাহী ক্ষমতাঃ
সৃষ্টি জগতের সবকিছুর নির্বাহী ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। কিন্তু গণতন্ত্রেসহ সকল মানবীয় রাষ্ট্রতন্ত্রে নির্বাহী ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রপ্রধানের। তারা চাইলেই যেকোনো দোষী ব্যক্তি কে বিনা শর্তে ছেড়ে দিতে পারে। আবার চাইলেই নির্দোষ ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারেন। অথচ নির্বাহী ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর এবং তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাবিশ্ব চলবে। কিন্তু গণতন্ত্রে বা অন্যান্য যেসব রাষ্ট্রতন্ত্র রয়েছে সেসব রাষ্ট্রপ্রধানদের ইচ্ছায় যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তা হতে পারে ভালো কিংবা খুব খারাপ অথবা আল্লাহ বিরোধী। তাই যারা" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এই কালেমা পড়বে এবং মানবে তারা নির্বাহী ক্ষমতা কাউকে দিবেনা। কেননা এটা একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতা।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা আমির বা খলিফার হাতে ক্ষমতা থাকে। তাহলে তারা যদি কোন সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কী হবে? সেখানেও একই যুক্তি। খলিফা বা আমির ইসলামবিরোধী কিছুই করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও ঈমানদারদের দায়িত্ব। কিন্তু গণতন্ত্র বা অন্যান্য যেসব তন্ত্র আছে তারা যেহেতু সরাসরি আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন তৈরি করে সেহেতু আমাদের ঈমানের দাবি রক্ষা করতে হলে এর থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহর সিফাতঃ
আমরা যারা কলেমা পড়ে মুসলিম দাবি করি। তাদের অধিকাংশই আজ আল্লাহ সিফাতের সাথে শির্ক তথা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করছি। মুখে দাবি করছি আমরা আল্লাহকে মানি এবং বলি আল্লাহ্ ছাড়া কেউই কিছু করার মালিক নয়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই জেনে এবং না-জেনে আল্লাহর সাথে শিরিকে লিপ্ত হচ্ছি।
যারা দুনিয়াবী বিভিন্ন স্বার্থের জন্য ঝাড়ফুঁক তাবিজ জাদু টোনা বান মারা ইত্যাদি করে মানুষের ক্ষতি বা নিজের লাভ করা চেষ্টা করি। তা স্পষ্টত শির্ক। কারণ মানুষের লাভ বা ক্ষতি সবই আল্লাহর হাতে। কিন্তু আমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে শিরিকী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করি। যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং কালেমার দাবী পূরণ করতে হলে এইসব পথ থেকে ফিরে আসতে হবে। কেননা যারা এসব করে আবার" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"ও বলে, তারা কখনোই এই কালেমা দাবিদার হতে পারেননা।
দ্বিতীয়ত আমরা অতিমাত্রায় শিরিকে লিপ্ত হচ্ছি তা পীরের দরবার এবং মাজারে গিয়ে। বাংলাদেশের তথাকথিত পীরের দরবার এবং মাজারে প্রতিনিয়ত মানুষ যায় তাদের দুনিয়াবী স্বার্থের আশায়(কিন্তু যাওয়া জায়েজ ইসলামী জ্ঞান অর্জন এবং কবরবাসীর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। (তবে শুধু কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য শহরে গমন করা না জায়েজ)।
আমাদের কিছু মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে পীর চাইলেই যে কোন বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করতে পারেন। অথবা মাজারে মানত করলে সেই আল্লাহর অলিরা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করেন। তাই নিজেদের বিভিন্ন দুনিয়াবী বিষয় নিয়ে প্রচুর টাকা পয়সা দিয়ে পীরের কাছে যায় তাদের তকদির পরিবর্তন করতে। যে তকদিরের ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহ হাতে। সেখানে মুসলমানরা পীর বা মাজারে যায় হাদিয়া তোফা নিয়ে তাদের তকদীরের পরিবর্তন হয়।
কিন্তু যাদের ইসলামের নূন্যতম জ্ঞান আছে তারা জানে যে তকদীর একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি মানুষেকে বিভিন্ন বিষয় দিয়ে পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এই বিষয়ে খুব সুস্পষ্ট আয়াত নাযিল করেছেন। আমাদের দেশের মানুষের বদ্ধমূল ধারণা যে পীর বা মাজারে গিয়ে মানত করলে সন্তান হয়। যাদের পুত্রসন্তান নেই তাদের পুত্রসন্তান হয়। যাদের চাকরি বাকরী নেই তাদের চাকরির ব্যবস্থা হয় ইত্যাদি। কিন্তু এইসব প্রতিটি বিষয় সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ্ নিজের ক্ষমতা কাউকে সাবকন্ট্রাক্টে দিয়ে দেন নি। সুতরাং যারা এইসব নিয়ত করে মানত করে তারা শির্কের মতো গুনাহ লিপ্ত।
শুধ তাইনয় মানত করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সহীহ্ বিভিন্ন হাদীসে এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এইসব জেনে এবং না জেনেও অনেকে পীর এবং মাজারে গিয়ে দোয়া চায়।
সর্বশেষ কথাঃ
"লা ইলাহা ইল্লাল্লা" এই কালেমা উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান না জেনেই পড়ে। এবং নিজেদের মুসলমান দাবি করে। আসলেই কি তারা আল্লাহর কাছে মুসলিম হতে পেরেছেন কিনা তা কখনোই খতিয়ে দেখে না। আসুন মৃত্যুর আগে একবার হলেও এই কালেমা সঠিকভাবে বুঝে পড়ি। এবং সেইমতো নিজেদের জীবনযাপন করি। যদি করতে না পারি তাহলে আমরাও আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর মতো মুসলিম হবো। যে কিনা পৃথিবী বিখ্যাত মুনাফিক। আসুন আল্লাহর রাস্তায় চলার চেষ্টা করি। তাহলে, আমরা প্রকৃত মুসলিম হয়ে ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবো। ইনশা আল্লাহ্!!
লেখক,
আবু বকর সিদ্দীক
বি.এ অনার্স, এম.এ ই'বি,কুষ্টিয়া।
তাকমিল , জা'মিয়া ফরিদাবাদ, ঢাকা।
সম্পাদক - হুসনে মোবারক
প্রকাশক - মো: ইশতিয়াক আহমেদ