জিলহজ্বের প্রথম দশকে যে, আমল করবো!
ফাজিল বা বরকতময় মাসের মধ্যে অন্যতম জিলহজ্ব মাস, জ্বিলহজ্ব মাস, অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে প্রথম দশ দিন ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এই দশ দিনের ফজিলত এবং আমলসমূহ বিস্তারিতভাবে কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানবো ইনশাআল্লাহ্!
১. এই দশ দিনের ফজিলত কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন:
> “وَالْفَجْرِ * وَلَيَالٍ عَشْرٍ* وَالشَّفْعِ وَالْوَطْرِ ”
“শপথ ফজরের, এবং দশ রাতের,এবং জোড় ও বেজোড়ের ।”
— [সূরা আল-ফজর, আয়াত: ১-২-৩]
তাফসীরকারগণের মতে, এই “দশ রাত” হলো জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন, যাকে আল্লাহ নিজে কসম করে গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
> “ما من أيام العمل الصالح فيها أحب إلى الله من هذه الأيام” قالوا: يا رسول الله، ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال: “ولا الجهاد في سبيل الله إلا رجل خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء”
“এই দশ দিনে আল্লাহর কাছে নেক আমল যত প্রিয়, অন্য কোনো সময়ে এত প্রিয় নয়।” সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ‘জিহাদও নয়?’ রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘জিহাদও না; তবে সেই ব্যক্তি যে জীবনের ও সম্পদের সবকিছু নিয়ে জিহাদে গিয়ে আর কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি।’
— [সহীহ বুখারী, হাদীস: ৯৬৯]
২. জিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের আমলসমূহ:-
১. নফল রোযা রাখা (বিশেষ করে ৯ তারিখ – আরাফা দিন):
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“আরাফার দিনে রোযা পালন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়।”
— [সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২]
২.তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা:
“الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد”
এই দোয়া ৯ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর (মোট-১৩ ওয়াক্ত) বলা সুন্নত।
সাহাবাদের আমল থেকে ইহা প্রমাণিত,
[মুসনানে ইবনে আবী শায়বা-৫৬২৭]
৩. বেশি বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, দু’আ, দান-সদকা।
مثل الذين ينفقون أموالهم في سبيل الله..
যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ দান করে তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত। [সূরা বাকারা-২৬১ ]
৪. অধিক পরিমাণে জিকির করা :
فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد والتسبيح..
তোমরা জিলহজ মাসে বেশি-বেশি তাকবীর পাঠ কর যেমন আল্লাহু আকবার, তাহমিদ পাঠ কর আলহামদুলিল্লাহ, তাহলিল পাঠ করো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ , তাসবিহ পাঠ করো সুবহানাল্লাহ। মুসনাদে আহমাদ -৫৪৬৪ ]
৫. বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা:
التائب من الذنب كمن لا ذنب له…
যে ব্যক্তি তাওবা করে, সে যেন এমন ব্যক্তি যে কোনো পাপই করেনি।
ইবনে মাজাহ- ৪২৫০]
৬. সৎকর্মে অগ্রগামী হওয়া ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা:
এই দিনগুলোতে চেষ্টা করা উচিত সবধরনের পাপ থেকে বিরত থাকা ও উত্তম চরিত্র গঠন করা।
যারা হজে যেতে পারেননি, তাদের জন্যও এই দিনগুলোর ফজিলত অনেক বেশি। সুতরাং এই সময়টাকে যেন নফল ইবাদতে, আল্লাহর স্মরণে ও পবিত্রতায় কাটাই।
৭. কুরবানী করা :
যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তাদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। এবছর (২০২৫ ইং) নেসাবের পরিমাণ হলো ৯০ হাজার টাকা।
“নবী (সাঃ) কুরবানির বিষয়ে বলেছেন:
“আদম সন্তানের জন্য কুরবানির দিনের চেয়ে প্রিয় কোনো দিন নেই।” [তিরমিযী, হাদীস: ১৪৯৩]
৮. জিলহজ্জ মাসের পূর্বেই হাত-পায়ের নখ, চুল ও সকল লোম কাটা।
عن أم سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال إذا دخلت العشر فأراد أحدكم أن يضحي فلا يمس من شعره ولا من بشره شيئا.
হযরত উম্মে সালমাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন [যুলহাজ্বের প্রথম] ১০ দিনের সূচনা হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছে করে, সে যেন চুল-নখ ইত্যাদি না কাটে। সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৪৫৪]
৯. আরাফার দিনের বিশেষ দু’আ পাঠ করা:
এ দিন রাসূল সা. একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। দোয়াটি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসূল সা. বলেছেন, উত্তম দোয়া হল আরাফা দিবসের দোয়া, এবং আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণের সর্বোত্তম কথা হল—
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-লারিকালাহু, লাহুল মুলকু,ওয়ালাহুল-হামদু, ওয়াহুয়া আলা-কুল্লি শাইয়িং কাদির।
অর্থ :
আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই, প্রশংসাও তাঁর। এবং তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮৫
১০. হজ্ব ও ওমরা করা :
যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা সামর্থ্য দিয়েছেন, জীবনে একবার হলেও হজ্জ আদায় করা ফরজ, এবং ওমরা আদায় করা।
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরয করা হ’ল, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে,) আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে মুখাপেক্ষীহীন’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)।
এই দশ দিনে নফল সালাত, দান-সদকা, তাওবা, যিকির ও দুআর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে জিলহজ্ব মাসের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন!!
লেখক-
আবু বকর সিদ্দীক
বি.এ অনার্স, এম.এ ই’বি,কুষ্টিয়া।
তাকমিল , জা’মিয়া ফরিদাবাদ, ঢাকা।