ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এবং মুঘল যুগের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন। তথ্যমতে, বিনত বিবির মসজিদই ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন ও শহরের প্রথম মসজিদ। ঢাকার প্রথম এবং একমাত্র মসজিদ যেটি একজন নারীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
বিনত বিবির মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকা এলাকায় অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। নারিন্দা পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত এই মসজিদটির গায়ে উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুসারে ৮৬১ হিজরি সালে, অর্থাৎ ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে মারহামাতের কন্যা মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করান।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ সকল মসজিদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরান ঢাকায় অবস্থিত। পুরান ঢাকার ৬নং নারিন্দা রোডে এখনো গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত নারিন্দা বিনত বিবির মসজিদটি।
ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির নতুন অংশে যত্ন করা হলেও, পুরাতন অংশটিকে একবারে অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। সুন্দর কারুকার্যের মোজাইক দেওয়ালে স্থানীয় হাবিজাবি পোস্টার লাগানো আছে, মসজিদের সামনে দোকান, ভেতরে পুরাতন মালামাল। এতটা অযত্ন অবহেলায় ফেলে হয়েছে বলে পুরান ঢাকা স্থানীয় বাসিন্ধারা অভিযোগ তুলেছে।
স্থনীয়রা বলছে, মসজিদটি এখনো সচল রয়েছে এবং আমরা নিয়মিত নামাজ আদায় করি। তবে এলাকার লোকজন একটি কমিটির মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। তাদের দবি দ্রুত ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির সংস্কার করার দাবি জানিয়েছে।
“বিনত বিবির মসজিদ”: ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকার নারিন্দা এলাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডের হায়াৎ বেপারীর পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। মসজিদের গায়ে উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুসারে ৮৬১ হিজরি সালে, অর্থাৎ ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে, বাংলার স্বাধীন সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি (আরাকান আলী নামক এক সওদাগরের কন্যা) এটি নির্মাণ করেন।
পুরান ঢাকা এলাকায় প্রচলিত আছে, এক সময় পারস্য উপসাগরের আশেপাশের লোকজন প্রায়ই জলপথে এ অঞ্চলে বাণিজ্যে আসতেন। পুরান ঢাকার এ এলাকা বুড়িগঙ্গার একটি শাখা যা বুড়িগঙ্গা হয়ে শীতলক্ষ্যায় গিয়ে মিশত। আরাকান আলী নামক এক সওদাগর এ এলাকায় বাণিজ্যের জন্য আসেন এবং তিনিই নামাজ পড়ার সুবিধার্থে এখানে বসবাস শুরু করেন ।
এখানে বসবাসকালীন এই মসজিদে আরাকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয় এবং তাকে মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়। সওদাগর আরাকান আলী মেয়ে বিনত বিবির মৃত্যুর পর মেয়ে নামে “বিনত বিবি” মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আরাকান আলীও মারা গেলে তাকেও তার মেয়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয়। সেই থেকে এই মসজিদটি বিনত বিবির মসজিদ নামেই পরিচিতি
লাভ করেন।
ইতিহাসবিদদের মতে, আদিতে বর্গাকার এবং এক গম্বুজবিশিষ্ট ছিল। বাংলা ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে (১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ) এটি সংস্কার ও পরিবর্ধন করা হয় এবং তখন আরও একটি গম্বুজ যুক্ত করা হয়, ফলে এটি দুই গম্বুজবিশিষ্ট হয়। বর্তমানে মূলভবনের গা ঘেঁষে তিনতলা নতুন ভবনও তৈরি করা হয়েছে। আদি মসজিদটি ছিল বর্গাকার। ভেতরের আয়তন ছিল ৩.৬৩ বর্গমিটার। প্রতিটি দেয়াল ৩.৬৩ মিটার প্রশস্ত।
বিনত বিবির মসজিদের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। ধাপে ধাপে ছয়তলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। পাশে অজুখানা করা হয়েছে। নিচের তলার মেঝে আর সিঁড়ি মার্বেল পাথরের ফলক দিয়ে মোড়ানো। পরের তলাগুলোতে পাতা হয়েছে উন্নত মানের টাইলস। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বসানো হয়েছে।
তবে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির নতুন অংশে যত্ন করা হলেও, পুরাতন অংশটিকে একবারে অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতটা অযত্ন অবহেলায় ফেলে রাখা মোটেই সমীচীন হচ্ছে না।
বিনত বিবির মসজিদ ঢাকার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যা প্রায় ৬০০ বছর ধরে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি ঢাকার মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।
