সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে আগামী জাতীয় বাজেটে ২% বরাদ্দ রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
২৯ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ মা ম হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ্ আলম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি হুসনে মোবারক, নৃত্যশিল্পী নিলুফার ওয়াহিদ পাপড়ী, সিদ্দিকুর রহমান, নাট্যনির্দেশক এম এ হামিদ, নূরুল হক, চলচ্চিত্র সমালোচক জিয়া উদ্দিন, বয়াতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। ২৯ মে জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাংস্কৃতি কর্মী সংঘ ।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘ ২০০৫ সালের ৩১ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে ” বাংলাদেশর সংস্কৃতির উন্নয়নের বিকাশে করণীয়” শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ।গোলটেবিল আলোচনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের পক্ষ থেকে গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত ১৫ টি প্রস্তাবনা দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত করা হয় এবং তৎকালীন সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয়গণের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের নেতৃবৃন্দ এই দাবির গুরুত্ব এবং বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের কাছে জাতীয় বাজেটে সাংস্কৃতিক বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিসমূহ লিখিতভাবে উপস্থাপন করে। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের দপ্তরেও লিখিতভাবে জমা দেয়া হয়। দাবিগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে তৎকালীন সরকার কিছু দাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই দাবিসমূহ নিয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সমূহের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করলেও পরবর্তীতে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আর মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪- এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বিশ্ববরেণ্য নোবেলজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘ নানারকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে পুনরায় তৎপরতা তৎপর হয়ে ওঠে।
২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ” ছাত্র-জনতারগণ অভ্যুত্থান ২০২৪, সংকট ও সম্ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা” ‘শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এই আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীগণ দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় ১৪ টি সংকট নির্ণয় করে, সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লিখিতভাবে জানানো হয়।
বিগত ৬ মে ২০২৫ সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘে ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় বাজেটে ২% বরাদ্দ রাখার আবেদন সম্বলিত পত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেয়া হয়। পাশাপাশি আগামী বাজেট নিয়ে বাজেট ঘোষণার পূর্বে সংস্কৃতিক সংগঠক ও শিল্পীদের সাথে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার একটি সাক্ষাৎকার প্রত্যাশা করে পত্র দেয়া হয়। এই পত্রের কপি অর্থ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় প্রতিষ্ঠারগণের বরাবর জমা দেয়া হয়। পাশাপাশি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টারগণের একান্ত সচিবকেও পত্রের কপি দেয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি। সাংস্কৃতিককর্মী সংঘের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম জানান নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে লিখিতভাবে সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাগণের
দপ্তরে এই আবেদনটি পৌঁছে দিয়েছি। খসড়া বাজেট অনুমোদনের পূর্বেই শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার একটি আলোচনা আয়োজনের জন্য আবেদন করেছি। এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করা হয়নি বিধায় এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তেমন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না ! আমরা মনে করি, নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্যকে পাশ কাটিয়ে কোন জাতি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা। সাংবাদিক বন্ধুদের নিয়ে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছি, কারণ আমরা মনে করি, যে কোন দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আপনারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। আমরা লক্ষ্য করেছি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলন, সংগ্রাম, রাজপথ অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়ে সংকট সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপদেষ্টাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, এই দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক, এর সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই, আমরা যা দাবি করেছি তা রাষ্ট্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য, সরকারকে শুধু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই দাবিগুলোর বাস্তবায়নের জন্য আমরা শিল্পীরা সরকারের পাশে থেকে দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।আমরা মনে করি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে এবং ঐতিহ্যকে একেবারেই গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, মানবিক আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে, মানুষ মানুষের সম্প্রীতি গড়ে তুলতে হলে, দুর্নীতি এবং অনাচারমুক্ত সমাজ গড়তে হলে, মানুষকে সংস্কৃতিবান করে তোলার কোন বিকল্প নেই। সেজন্য আগামী প্রজন্মকে স্কুল জীবন থেকেই একটি ছেলেমেয়েকে নিজের দেশ-সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। সংস্কৃতিবান নতুন প্রজন্ম এবং নাগরিকগণ সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে আলোকিত সমৃদ্ধ এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে। কাজেই আগামী বাজেটে এই দাবিগুলো প্রতিফলন আমরা দেখতে চাই। সরকার যদি এ বিষয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে আমরা শিল্প সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টরা দাবি আদায় আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।
আমরা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, দেশ এবং মানুষের কল্যাণে,নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য এই দাবিরসমূহ আদায়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে আগ্রহী নই, সরকার দাবিসমূহ সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করলে আমরা আনন্দিত হব। তবে তবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, আমরা আন্দোলন করতেও দ্বিধাবোধ করব না।কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজপথে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, অনেক শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাংস্কৃতিককর্মী আমাদের সাথে আছে। আমাদের যৌক্তিক দাবির প্রতি অবহেলা করলে নিশ্চয়ই আমরা আবার রাজপথে নামতে পারে বাধ্য হব।
প্রত্যাশা করি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে, এই দাবিসমূহ বাস্তবায়নে আগামী জাতীয় বাজেটে বাজেটের ২% বরাদ্দ রাখতে প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।